প্যারাডাইস পেপারস: অর্থপাচারের তদন্ত দাবি......!!!
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে গোপনে টাকা লগ্নিকারী হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
একই কারণে নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে হলে বাংলাদেশে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেই প্রশ্ন উঠছে।
এর মধ্যে সম্প্রতি প্যারাডাইস পেপার্সে ইউরোপের দেশ মাল্টায় বিনিয়োগকারী হিসেবে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ দেড় ডজন বাংলাদেশির নাম আসায় এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে, কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরাও।
২০১৬ সালে পানামা পেপার্স এবং গত বছরের নভেম্বরে প্যারাডাইস পেপার্সে অনেক বাংলাদেশির নাম এলেও সেই বিষয়ে কোনো সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।
অর্থপাচারের তদন্তের দাবি জানিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দুদিন আগে সংসদে বলেন, “অর্থপাচার, ঋণ জালিয়াতির তদন্ত আশা করি করা হবে, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাকিস্তান পানামা পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারলে আমরা পারছি না।”
তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়গুলো দেখার কাজ দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ)। তারা কী করছে সেটা আমরা বাইরে থেকে তো কিছু বলতে পারছি না।”
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন দুর্নীতি বিরুদ্ধে প্রচারণাকারী সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও।
গত সপ্তাহে প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশির নাম এসেছে তারা মাল্টায় নিবন্ধিত বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন।তাদের কয়েকজন বিদেশের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। আবার বাংলাদেশে ব্যবসা করা বিদেশিরা এদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে সেই দেশে বিনিয়োগ করেছেন বলে ফাঁস হওয়া নথিতে উঠে এসেছে।
২০১০ সালের ৪ মে নিবন্ধন করা ভেনাস ওভারসিজ হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক মুসা বিন শমসের।জুলফিকার আহমেদ বিনিয়োগ করেছেন খালেদা শিপিং কোম্পানি লিমিটেডে, এর নিবন্ধন হয়েছে ১৯৯৯ সালের ২৫ মে। আসাদুল টাকা রেখেছেন ইনট্রেপিড ক্যাপিটাল লিমিটেড ও ইনট্রেপিড গ্রুপ লিমিটেডে, তার দুটো কোম্পানিরই নিবন্ধন হয়েছে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ। মাহতাবার কোম্পানির নাম সেলকোন শিপিং কোম্পানি লিমিটেড, নিবন্ধন ২০০৩ সালের ২৩ অগাস্ট।
২০১৬ সালের ১০ জুন নিবন্ধিত ডাইনামিক এনার্জি হোল্ডিং লিমিটেডের পরিচালক ফজলে এলাহী। বারিধারা ডিওএইচএসের ঠিকানা দেওয়া আমানউল্লাহ চাগলা টাকা রেখেছেন পদ্মা টেক্সটাইলস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি খুলে, এর নিবন্ধন হয়েছে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ।
আবাসিক ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া ব্যবহারকারী তাজুল ইসলাম তাজন ও তুহীন ইসলাম সুমন মাল্টায় বিনিয়োগ করেছেন জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে, তাদের এই কোম্পানির নিবন্ধন হয়েছে ২০০৯ সালের ৫ জুন।
ইউসুফ খালেক নামের একজন বাংলাদেশি আবাসিক ঠিকানা ব্যবহার করেছেন ইতালির পাদোভা শহরের।এদের বাইরেও বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে।
অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার নজির রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তরিক হয়ে উদ্যোগ নেয় তাহলে অর্থপাচার হয়ে থাকলে তাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”
পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপারসের আগের দফায় অনেক বাংলাদেশির নাম এলেও তাদের বিষয়ে ‘বাস্তব কোনো পদক্ষেপ’ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে দুদকের কার্যক্রম জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে যে সকল ব্যক্তিদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কমিশনের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞার নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল কাজ করছে। এই দলের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থপাচারে সংশ্লিষ্ট থাকেন কেবল তখনই দুদক অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে। তবে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যে সকল ব্যক্তির নাম এসেছে তাদের অনুপার্জিত আয়ের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করবে এবং অনুসন্ধানে যদি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য কোনো প্রেডিকেটেড অফেন্স পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কমিশন প্রাপ্ত তথ্যাদি বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইইউ, পুলিশের সিআইডি অথবা রাজস্ব বোর্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হবে।”
২৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সূত্রঃ বিডি নিউজ ২৪।


No comments