Header Ads

ভাইয়া, একটা বকুল ফুলের গাছ দেন.........!!!



ফুল গাছ কেনার পর স্ত্রী ও শ্যালিকাকে পাশে নিয়ে মাশফিক।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা তালগাছের কথা নিশ্চয় মনে আছে। সেখানে কবি বলেছেন, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায় একেবারে উড়ে যায়; কোথা পাবে পাখা সে?
উড়ে যাওয়া তো দূরের কথা; শহরের ইট-পাথরের উঁচু উঁচু দালানোর ভিড়ে জায়গা করে নেওয়ার জায়গা মিলছে না তালগাছের। তালগাছের বদলে বিশাল বিশাল ভবন গড়ে উঠছে রাজধানীজুড়ে। চারিদিকে কেবল ভবন আর ভবন।
তবে ইট-কাঠের ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই কিন্তু তালগাছ লাগাতে না পারলেও সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগান। রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ঘুরলেই তার প্রমাণ মিলবে।
বাড়ির সামনের অল্প ফাঁকা জায়গাতেই অনেকে গড়ে তুলছেন বাগান। বাসার সামনের ব্যালকনিতে টবে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। ছাদেও বিভিন্ন ধরনের বনসাই, ফুলের চারা লাগানো হচ্ছে। বড়ো টবে করে ফলের চারাও লাগাচ্ছেন অনেকেই।
রাজধানীবাসীর গাছের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠছে নার্সারি। সেসব নার্সারিতে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ প্রজাতির গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে।
আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গাছ বিক্রির দোকান। বনানির রাস্তার পাশেও অনেক দোকান রয়েছে। সেখান থেকে অনেকেই সংগ্রহ করছেন পছন্দের গাছ।
রাজধানীর গুলশান ১ নম্বর থেকে লিংক রোডের দিকে আসতে মাঝপথে পড়ে গুদারা ঘাট। ওই এলাকায় উৎকট গন্ধ আর দমকা হাওয়ায় ধুলোবালি থেকে রেহাই পেতে জোর কদমে পার হয়ে আসতেই চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ।
কাঠা পাঁচেক জায়গায় বিভন্ন ধরনের গাছ। কোনোদিকে গাঢ় সবুজ অবস্থায় গাদাগাদি করে রাখা আছে গাছ। আবার কোনো দিকে হরেক রকমের ফুল। নার্সারির এক কোণে রাখা আছে বিভিন্ন ধরনের ফল গাছের চারা। যেগুলো টবে করে লাগানো রয়েছে। রাখা যাবে বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে।
বাইরে থেকেই হরেক রকমের গাছ দেখতে দেখতেই কানে আসে, ভাই, বকুল ফুলের একটা গাছ দেন তো। হালকা গড়নের পঞ্চাষোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক বছর চব্বিশের ওই যুবকের কথায় সাড়া দিয়ে তাকে বকুল গাছের চারার দিকে নিয়ে গেলেন।
শ'তিনেক বকুল গাছ সেখানে একসঙ্গে রাখা আছে। পলিথিনের ব্যাগে রাখা প্রতিটি গাছের দাম পঞ্চাশ টাকা। এছাড়া আরো তিনশ প্রজাতির গাছ রয়েছে গুলশান নার্সারি নামের ওই গাছ বিক্রির দোকানে।
বাইরে থেকে এতোক্ষণ দেখা শেষে এবার ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে আলকেসিয়া, সাইকাস পাম, এরিকাপাম, আড়ালিয়া পাতাবাহার, বকুল, জাম, তেঁতুলসহ নানা রকম গাছ। আরো ভেতরে যেতেই সফেদা, ডালিম, লিচু, আম এবং কামরাঙার গাছও দেখা যায়।
ভেতরে ঢুকেই কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি। আগে গ্রামে থাকতে বিকেলে বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতাম। এখানে তো সেই সুযোগ নেই। আবার সময়ও কাটে না।
তিনি আরো বলেন, গতবছর দুইটা পাখি কিনেছিলাম। কিন্তু পাখি মারা গেলে খুব খারাপ লাগে। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম গাছ লাগাব। এর আগে চারটা গাছ লাগিয়েছি। আমার বনসাইও আছে। আজকে বকুল গাছ নিলাম।
তবে দাম একটু বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দাম যদি আরেকটু কম হতো তাহলে ভালো হতো।
খানিকবাদেই নার্সারিতে আসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাশফিক নামের এক যুবক। সঙ্গে করে স্ত্রী তৃপ্তি ও শ্যালিকা ইতিকে নিয়ে এসেছেন তিনি। তার স্ত্রীও চাকরিজীবী। মুঠোফোন সেবাদাতা এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। আর শ্যালিকা পড়ছেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ছুটির দিন হওয়াতে নার্সারিতে আসার জন্য আজকের দিনটাকে বেছে নিয়েছেন তারা। অনেক ঘুরে ঘুরে ফুলের চারটি গাছ কিনতে দেখা গেল তাদের। পরে সেগুলো লাগানোর জন্য টবও কিনলেন ওই নার্সারি থেকে।
ফুলের চারটি গাছ কিনেছেন দু'শ টাকা দিয়ে এবং চারটি টবের দাম পড়েছে আড়াইশ টাকা। পরে নার্সারিতে কর্মরত একজন সেগুলো টবে লাগিয়ে দেন।
কথায় কথায় নার্সারির মালিক ফিরোজ আহমেদ জানান, ২৫ বছর আগে এই জায়গাটাতে নার্সারি গড়ে তোলেন তিনি। প্রায় তিনশ প্রজাতির গাছ এখানে রয়েছে। আশুলিয়াতে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে তার আরেকটি নার্সারি রয়েছে। সেখান থেকে গাছ নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করেন। আবার এখানেও কিছু গাছ পুনরুৎপাদন করেন।
তিনি আরো জানান, গাছ লাগানোর টব, মাটি, গোবর সার, গাছে পানি ও ওষুধ ছিঁটানোর যন্ত্র ও টুকটাক ওষুধও বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০ জন এখানে গাছ কিনতে আসে। কেউ ফুলের গাছ নেন আবার কেউ ফলের নেন। কেউ আবার সবরকম গাছ কেনেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়া রাজধানীর বেশ কিছু দোকানে ভাড়ায় গাছও দেন তিনি। একশ গাছ এক মাসের জন্য দিলে সাত হাজার টাকা নেন। ১৫ দিন পর পর গাছ পরিবর্তন করে দিয়ে আসেন।
তবে বয়সের ভারে এখন আর বেশি গাছ ভাড়া দিতে পারেন না। চারজনকে রেখেছেন নার্সারিতে কাজ করার জন্য। তারাই মূলত গাছে পানি দেওয়া এবং বিক্রির কাজ করেন।
নার্সারি থেকে চলে আসার সময় ৫৫ বছর বয়সী ফিরোজ আহমেদ জানান, আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে দেড় বছর আগে। এখন তৃতীয় ধাপে রয়েছে। ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে এসেছি। এখন একটু ভালো আছি।
তিনি আরো জানান, মাসে এখান থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে কেবল টাকার জন্য নার্সারিটা চালাই না। সবুজের মধ্যে, গাছের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে। আমি আর কয়দিনইবা বাঁচবো।
তিনি আরো বলেন, এখানে এসে বসলে সুন্দর মনের অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। যারা গাছ কেনে তাদের মন কি খারাপ হতে পারে? তাদের কাছে গাছ দিই আমি। আশেপাশের অনেকেই এখানে এসে আড্ডা দেয়; ভালো লাগে। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
লিখেছেন কাওসার বকুল।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ

No comments

Powered by Blogger.